আতিক, গাইবান্ধা :
পর্যাপ্ত পানিপ্রবাহ না থাকায় এবং অতিরিক্ত পলি জমার কারণে গাইবান্ধার আলাই নদ পরিণত হয়েছে ফসলি জমিতে। স্থানীয়রা বলছেন, খনন বা সংস্কার না করার কারণে আলাই এখন নামসর্বস্ব একটা নদ হয়ে গেছে। এ নদে বছরের বেশির ভাগ সময় পানিপ্রবাহ থাকে না। আবার বর্ষার সময় উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নদে প্রচুর পলি জমে।
উত্তরাঞ্চলের এ জেলার ওপর দিয়ে আলাই ছাড়াও বয়ে গেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া, ঘাঘটসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাইবান্ধা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আলাই নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ৩৯ মিটার। এর উৎপত্তি ঘাঘট নদ থেকে। সর্পিলাকার এ নদ সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে সাঘাটা উপজেলার ভূতমারা সীমানায় গিয়ে মিশেছে কাটাখালী নদীতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আলাই নদ আজ পর্যন্ত একবারও সংস্কার বা খনন করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর পলি জমে নদটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। আবার বর্ষায় যখন উজান থেকে ঢল নেমে আসে, পলির কারণে সেই পানি নদটি ধারণ করতে পারে না। এতে নদীভাঙনের পাশাপাশি বন্যার কবলে পড়ে আশপাশ এলাকা। বাদিয়াখালী ইউনিয়নের রিফাইতপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আলাই নদের বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছে আশপাশের বাসিন্দারা। এর মধ্যে আব্দুল মোন্নাফ নামের একজন এবার ধান আবাদ করেছেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নদে পানি না থাকায় আমি ৮-১০ বছর ধরে ধান আবাদ করছি। তবে এটি খনন করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে আশপাশের বাসিন্দাদের অনেক উপকার হতো।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য নুর আলম এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নাব্য সংকটের কারণে আলাই নদে পানি নেই। এটি নামসর্বস্ব একটা নদ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা সেখানে নানা ফসল আবাদ করছে। নদটি খনন করে নাব্য ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আলাই নদটি মৌসুমি প্রকৃতির। এ কারণে সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে পলি জমার আগে প্রায় সারা বছরই পানি থাকত। ওই সময় নানা জাতের মাছও মিলত বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু বলেন, ‘নদী শাসন না হলে একসময় হয়তো এ নদটি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। তাই অস্তিত্ব রক্ষায় এটি খনন ও সংস্কার করা জরুরি।’
পাউবো গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নদটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’