পুদিনা পাতা চাষে স্বাবলম্বী সিরাজদিখানের কৃষক।
এটিভি নিউজ ডেস্ক: জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বালুর চরের মুষ্টিমেয় কয়েকটা ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত এলাকায় পুদিনা পাতা চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। জেলার ভিতরে শুধু সিরাজদিখান উপজেলাতেই চাষ হয় পুদিনা পাতার বালুর চর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে কয়েক যুগ থেকে পুদিনা পাত চাষ করে আসছে এখানকার কৃষকরা।
রমযানুল মোবারক ও আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভালো দামের আশায় সহজ ও অল্প খরচে চাষিরা পুদিনা পাতার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে অত্র এলাকার পুদিনা কৃষকরা। সিরাজদিখান বালুর চর ইউনিয়ন ছাড়া উপজেলার অন্যকোথাও পুদিনা পাতার চাষ হয়না বলেই জানান সিরাজদিখান কৃষি বিভাগ। তাই ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের অতি নিকটবর্তী হওয়ায় এই এলাকায় পুদিনা চাষের ব্যাপক চাহিদা। এই এলাকার অনেকে পুদিনা চাষ করেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
জানা গেছে, পুদিনা গাছের পাতা তরকারির সঙ্গে সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাদ্যকে সুরুচিসম্মত করতে পুদিনা পাতার কোন জুড়ি নেই। সুদুর অতীত থেকে দেশে পুদিনা পাতার চাষ হয়ে আসছে। তবে সচরাচর ধনিয়া পাতার ব্যবহার থাকলেও পুদিনা পাতার ব্যবহার তেমন একটা বাড়েনি বাংলাদেশের আনাচ-কানাচে এর একটি কারণ হলো পুদিনা পাতার প্রচার বা ব্যাবহার করতে জানেনা সবাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালুর চর ইউনিয়নের চান্দের চর খাসকান্দি মদিনা পাড়া এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে পুদিনা পাতার। সবাই পুদিনা চাষে পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। উদ্দেশ্যে রমজানে ভালোমানের পুদিনা পাতা বাজারজাত করা। আর রমজানকে সামনে রেখে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে পুদিনা কৃষকরা। তবে সরকারিভাবে যদি এই চাষে কৃষকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিত তাহলে ভবিষ্যতে আরো বেশি পুদিনা পাতার চাষ হতো এবং দেশব্যাপী আরো বিস্তৃত হতো বলে জানান মদিনা পাড়ার পুরাতন কৃষক আবুল দেওয়ান।
চান্দের চরের কৃষক মো. আমির হোসেন জানান, আমরা বিগত ৪০/৫০ বছর ধরে এই চাষে জড়িত। আমাদের অঞ্চলে এই চাষ আগে অনেকেই করতো, এখন আমরা এই চাষ করি। আমরা চলতি মৌসুমে প্রায় ১০০ শতক জায়গায় পুদিনা পাতার চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রমজানকে ঘিরে পুদিনা পাতার ব্যাপক বাজারজাত করা যাচ্ছে। তবে এই চাষের জন্য বর্তমানে যে আবাহাওয়া রয়েছে এতে মোটামোটি ভালো, বেশি বৃষ্টি আবার কম বৃষ্টি কোনটাই এই চাষের জন্য উপকারি না। সবচেয়ে ক্ষতি হয় পানি কম থাকলে, বেশি বৃষ্টিতেও তেমন ক্ষতি হয়না। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে এ বছর রমজানে ভালো অর্থের পুদিনা বাজারজাত করতে পারবো বলে আশা করছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই চাষটি পুরো বছর জুড়ে করা যায়, তবে রজমানের সময় এর চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কর রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলায় তীব্র যানজট নিয়ে আমরা পুদিনা চাষিরা আশঙ্কায় থাকি এবং আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো ও ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ খানাখন্দে ভরপুর থাকায় আমরা যথা সময়ে পুদিনাপাতা নিয়ে বাজারে যেতে পারিনা। মাঝেমধ্যে ভ্যানগাড়ি ভর্তি পুদিনার বুজা নয়ে অনেক ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। কারণ আমরা পুদিনা পাতাগুলো তোলার পরে সর্বোচ্চ ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু যানজট আর রাস্তা খারাপের কারণে পুদিনা পাতা যথাসময়ে নিতে পারিনা। যেহেতু এগুলো কাঁচামাল তাই পথেই খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।ওই এলাকায় কথা হয় আরো বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে, তাদের মধ্যে মো. সুন্দর আলী নামে এক কৃষক জানান, আমি প্রায় ৫০ শতক জমিতে পুদিনা পাতার চাষ করেছি। চাষও ভালো হয়েছে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল লাভবান হচ্ছে সবাই। আর যেহেতু রমজান মাস চলমান, তাই আমাদের লাভবান হওয়ার সব থেকে ভালো সময় এইটা। কারণ রমজান মাসে পুদিনা পাতার চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। তবে এলাকার অনেকের আগ্রহ থাকলেও প্রয়োজনয়ি পরামর্শ না পাওয়ায় এই চাষে ইচ্ছা থাকলেও করা হয়ে উঠছে না।
খোজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শহরগুলোতে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলে ও বিয়ে বাড়িতে পুদিনার ব্যবহার বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক। বিশেষ করে রমজান মাসে বড়া, চাটনি, সালাত, বোরহানি বানানোর কাজে ব্যাপক হারে পুদিনাপাতা ব্যবহার হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে টুথ পেষ্ট, তামাক, চা, সরবত, মিন্ট চকলেটসহ বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। তাই পুদিনা চাষও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর পুদিনাপাতার সবচাইতে বেশি চাহিদা হলো বিয়ে বাড়িতে বোরহানি বানানোর কাছে কারণ পুদিনাপাতা ছাড়া বোরহানি অর্জিনাল বোরহানি হয়না।
এ বিষয়ে উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, পুদিনা পাতার চাষ বানিজ্যিকভাবে শুধু উপজেলার বালুর চর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাতেই হয়, তাছাড়া জেলাতে আর হয়না। আর বাকিরা যা চাষ করে, তাও বাড়ির ছাদে ব্যালকনিতে টবে। তার আনুমানিক মতে অত্র অঞ্চলে প্রায় ৫/৬ হেক্টরের মতো পুদিনাপাতার চাষ হয়।