বিপ্লব কুমার দাস:
নীলফামারীর ডোমারের চান্দখানা কেতকীবাড়ী গ্রামে বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম। ৮৪ বছর বয়সী আজিজুল প্রায় ৩০ বছর ধরে হাতপাখা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। সংসারের পাশাপাশি দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয় তাকে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ আজিজুল জীবনের শেষ বয়সে এসেও সংসারে রুটি-রুজি করতে হাতপাখা বিক্রি করেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হাতপাখা বিক্রি করেন বৃদ্ধ আজিজুল। পৌর শহরের উপজেলা মোড়ের পাশের গলিতে কথা হয় তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
হাতপাখা তৈরির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, সংসারের ঘানি টানার পাশাপাশি মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে যেয়ে ক্লান্ত তিনি। প্রতিদিন কাপড় দিয়ে হাতপাখা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন তিনি।
জানা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে আজিজুলের হাতপাখার কদর বেড়েছে। গরমের শুরুতে প্রতিদিন ২০-২২ পিস হাতপাখা বিক্রি হতো। এখন হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিটি হাতপাখা বিক্রি করছেন ৫০-৭০টাকা। এভাবে আট মাস চলে তার হাতপাখার ব্যবসা। বাকি সময় বাড়িতে কৃষি কাজ করে চলে সংসার।
আজিজুল ইসলাম আরও জানান, কাপড়ের হাতপাখা তৈরির পর বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। তার ছোট মেয়ে নবম শ্রেণি ও অন্য মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
ডোমার ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা। এরমধ্যে অনেক সময় থাকে না বিদ্যুৎ। আবার বিদ্যুৎ থাকলেও ফ্যানের বাতাস গরম। তবে কষ্ট হলেও হাতপাখার বাতাস অনেক শীতল। চাচার কাছে বিভিন্ন রঙের হাতপাখা পাওয়া যায়। দামও খুব বেশি না। তাই আমিও কিনেছি।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ভাপসা গরমে প্রায়ই বিদ্যুৎ না থাকায় হাতপাখা কিনতে হলো। আজিজ চাচার কাছ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে হাতপাখা কিনলাম।
আজিজুল ইসলাম জানান, সংসারের ঘানি টানার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে প্রায়ই তাকে হাটবাজারে হাতে করেই হাতপাখার বিক্রি করতে হয়। তিনি লেখাপড়া না জানলেও সন্তানদের শিক্ষিত করতে নেমেছেন জীবন যুদ্ধে।