সকাল থেকে আমাদের সাম্প্রতিক নগর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ের প্রকল্পের উপর পাখি বিষয়ক গবেষণাপত্রটির চূড়ান্ত লেখাগুলো পুনরায় পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের যেখানে ধারণা আমাদের শহরে কাক-চিল ছাড়া আর কেউই নেই, সেখানে গবেষণার ফলাফলগুলো দেখে একই সাথে এক আনন্দ এবং শঙ্কা কাজ করছিলো. বাংলাদেশের নগরে টিকে থাকবে তো এই পাখিরা? হঠাৎ অন্যরকম এক পাখির ডাকের দিকে মনোযোগ সরে গেল। বেশ কিছুদিন পর শুনলাম আবার এই ডাকটি। ডেস্কের পাশে পড়ে থাকা ক্যামেরা নিয়ে ছুটলাম পাখির ডাকের পিছনে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর খুঁজে পেলাম বড় রেইনট্রি গাছের ডালে। ক্যামেরাবন্দি করলাম কিছু মুহূর্ত। পাখিটির নাম চন্দনা টিয়া ইংরেজিতে Alexandrine Parakeet (আলেকজান্দ্রিন প্যারাকিট) আর বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria (সিটাকুলা ইউপ্যাটরিয়া)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরে ক্যাম্পাস এলাকা একসময় টিয়া পাখিতে পরিপূর্ণ ছিল। শুধু ক্যাম্পাস এলাকা নয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণে পুরো ঢাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে টিয়ারা। খাদ্যাভাব, আবাসস্থলের সংকট, দূষিত পরিবেশ, চোরা শিকার টিয়া জাতীয় পাখিদের সংখ্যা আজ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে এ শহর থেকে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৭ শত এর অধিক প্রজাতির পাখি রয়েছে। দেশ ছোট হলেও কি হবে? বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশকে করে তুলেছে পাখিদের প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতায় ঐশ্বর্যময়।
প্রায় সবার কাছে অতি প্রিয় সুন্দরতম পাখিরা হলো টিয়া জাতীয় পাখি। পৃথিবীতে প্রাপ্ত টিয়াপাখির সংখ্যা প্রায় ৪০০ এর মত। এই পাখিদের মধ্যে Psittaciformes বর্গের অন্তর্গত Psittacidae পরিবারের সাত প্রজাতির টিয়ার দেখা মেলে বাংলাদেশে। যারা তাদের অপূর্ব বর্ণ শরীরের আকারে সর্বমহলে সমাদৃত। আর এই সাত প্রজাতির পাখির মধ্যে ঢাকা শহরে দেখা মেলে চার প্রজাতির।
বাংলাদেশে সবথেকে বড় আকারের টিয়ার নাম চন্দনা টিয়া। চন্দনা টিয়া বা Alexandrine Parakeet নামটি সম্রাট আলেক্সান্ডারের নাম থেকে নেওয়া। তার সময়ে এই পাখিটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria (সিটাকুলা ইউপ্যাটরিয়া)। পাখিটির দৈর্ঘ্য ৫৩ সে.মি.। বিশাল লাল চঞ্চুর শেষ প্রান্ত কমলা। কাঁধে লালচে পট্টি। লম্বা সবুজ লেজের কিছু অংশ নীল ও হলুদ। পুরুষের থুতনিতে কালো রেখা, আর গলায় ঘাড়ে গোলাপি বলয়।
দিবাচর এই পাখি, একাকী অথবা ছোট দল সহকারে ঘোরে। সাধারণত ফল, শস্য, বীজ, ফুল ও মধু খেয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস প্রজনন ঋতু। গাছের গর্ত বা বিল্ডিং এর ফাঁকে বাসা তৈরি করে। বাংলাদেশে এটি বিরল আবাসিক পাখি হিসেবে গণ্য। ২০০০ সালের আইইউসিএন বাংলাদেশ এর তথ্যমতে ‘মহাবিপন্ন’ পাখিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেও বর্তমানে ২০১৫ সালের তথ্য মতে পাখিটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’-এর আওতায়। ঢাকা শহরে একটি সময় ভালো সংখ্যায় এই পাখিটি থাকলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে। ঢাকা শহরের বড় বড় সবুজ আচ্ছাদন সমৃদ্ধ স্থান, বড় বিল্ডিং এর ফোঁকরে দেখা মেলে এদের। কিন্তু সংখ্যায় কম।
সকাল থেকে আমাদের সাম্প্রতিক নগর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ের প্রকল্পের উপর পাখি বিষয়ক গবেষণাপত্রটির চূড়ান্ত লেখাগুলো পুনরায় পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের যেখানে ধারণা আমাদের শহরে কাক-চিল ছাড়া আর কেউই নেই, সেখানে গবেষণার ফলাফলগুলো দেখে একই সাথে এক আনন্দ এবং শঙ্কা কাজ করছিলো. বাংলাদেশের নগরে টিকে থাকবে তো এই পাখিরা? হঠাৎ অন্যরকম এক পাখির ডাকের দিকে মনোযোগ সরে গেল। বেশ কিছুদিন পর শুনলাম আবার এই ডাকটি। ডেস্কের পাশে পড়ে থাকা ক্যামেরা নিয়ে ছুটলাম পাখির ডাকের পিছনে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর খুঁজে পেলাম বড় রেইনট্রি গাছের ডালে। ক্যামেরাবন্দি করলাম কিছু মুহূর্ত। পাখিটির নাম চন্দনা টিয়া ইংরেজিতে Alexandrine Parakeet (আলেকজান্দ্রিন প্যারাকিট) আর বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria (সিটাকুলা ইউপ্যাটরিয়া)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরে ক্যাম্পাস এলাকা একসময় টিয়া পাখিতে পরিপূর্ণ ছিল। শুধু ক্যাম্পাস এলাকা নয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণে পুরো ঢাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে টিয়ারা। খাদ্যাভাব, আবাসস্থলের সংকট, দূষিত পরিবেশ, চোরা শিকার টিয়া জাতীয় পাখিদের সংখ্যা আজ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে এ শহর থেকে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৭ শত এর অধিক প্রজাতির পাখি রয়েছে। দেশ ছোট হলেও কি হবে? বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এই দেশকে করে তুলেছে পাখিদের প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতায় ঐশ্বর্যময়।
প্রায় সবার কাছে অতি প্রিয় সুন্দরতম পাখিরা হলো টিয়া জাতীয় পাখি। পৃথিবীতে প্রাপ্ত টিয়াপাখির সংখ্যা প্রায় ৪০০ এর মত। এই পাখিদের মধ্যে Psittaciformes বর্গের অন্তর্গত Psittacidae পরিবারের সাত প্রজাতির টিয়ার দেখা মেলে বাংলাদেশে। যারা তাদের অপূর্ব বর্ণ শরীরের আকারে সর্বমহলে সমাদৃত। আর এই সাত প্রজাতির পাখির মধ্যে ঢাকা শহরে দেখা মেলে চার প্রজাতির।
বাংলাদেশে সবথেকে বড় আকারের টিয়ার নাম চন্দনা টিয়া। চন্দনা টিয়া বা Alexandrine Parakeet নামটি সম্রাট আলেক্সান্ডারের নাম থেকে নেওয়া। তার সময়ে এই পাখিটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria (সিটাকুলা ইউপ্যাটরিয়া)। পাখিটির দৈর্ঘ্য ৫৩ সে.মি.। বিশাল লাল চঞ্চুর শেষ প্রান্ত কমলা। কাঁধে লালচে পট্টি। লম্বা সবুজ লেজের কিছু অংশ নীল ও হলুদ। পুরুষের থুতনিতে কালো রেখা, আর গলায় ঘাড়ে গোলাপি বলয়।
দিবাচর এই পাখি, একাকী অথবা ছোট দল সহকারে ঘোরে। সাধারণত ফল, শস্য, বীজ, ফুল ও মধু খেয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস প্রজনন ঋতু। গাছের গর্ত বা বিল্ডিং এর ফাঁকে বাসা তৈরি করে। বাংলাদেশে এটি বিরল আবাসিক পাখি হিসেবে গণ্য। ২০০০ সালের আইইউসিএন বাংলাদেশ এর তথ্যমতে ‘মহাবিপন্ন’ পাখিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেও বর্তমানে ২০১৫ সালের তথ্য মতে পাখিটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’-এর আওতায়। ঢাকা শহরে একটি সময় ভালো সংখ্যায় এই পাখিটি থাকলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে। ঢাকা শহরের বড় বড় সবুজ আচ্ছাদন সমৃদ্ধ স্থান, বড় বিল্ডিং এর ফোঁকরে দেখা মেলে এদের। কিন্তু সংখ্যায় কম।
ঢাকার বাইরে বৃহত্তর রাজশাহী, বগুড়া, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর অঞ্চলেও দেখা মেলে এই পাখির। পাখিটি বাংলাদেশে ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও বিস্তৃত। সারা বিশ্বে পাখিটি আইইউসিএন-এর তথ্য মতে ‘প্রায় বিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে। পাখিটি ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
বাংলাদেশে সচরাচর সব স্থানে দেখতে পাওয়া টিয়ার নামটি শুধুই টিয়া বলি, যার ইংরেজি নাম Rose-ringed Parakeet (রোজ-রিংড প্যারাকিট) ও বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula krameria (সিটাকুলা ক্রামেরিয়া)।
আকারে বড় প্রায় ৪২ সে.মি.। সবুজ দেহ। দীর্ঘ সবুজ সরু লেজে নীল আভা। পুরুষের থুতনিতে কালো রেখা, আর গলায় ঘাড়ে গোলাপি বলয়, হলদে সাদা চোখ। লাল চঞ্চু। জানুয়ারি থেকে জুলাই এর মধ্যে এরা প্রজনন করে। ঢাকা শহরে গাছের ফোকর, বিল্ডিং এর বিভিন্ন গর্তে এরা বাসা তৈরি করে। ফলভুক পাখিটি আমাদের দেশের আবাসিক পাখি।
মদনা টিয়া (Red-breasted Parakeet) যার বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula alexandri (সিটাকুলা আলেকজান্দ্রি)। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে স্মরণ করে দেওয়া, যার সেনাবাহিনী গ্রিক অঞ্চলে এই প্রজাতির পাখি নিয়ে এসেছিল। আকারে বেশ বড়, ৩৮ সেমি। লালচে পেট ছাড়া দেহ সবুজ। কাঁধ হলদে এবং মাথা ধূসর। হলদে চোখ এবং চোখ থেকে কপাল পর্যন্ত কালো ব্যান্ড। নিচের চঞ্চু কালো। লেজ বেগুনী-নীল এবং লেজের সম্মুখ হলুদ। পুরুষের উপরের চঞ্চু গাঢ় লাল আর স্ত্রী এর কালচে বাদামি।
দিবাচর এই পাখিটি মাঝারি গ্রুপে, একাকী অথবা জোড়াবদ্ধ ভাবে থাকে। সাধারণত নরম কাণ্ড, ফল, বীজ, শস্যদানা এবং মধু খায়।মার্চ থেকে জুন মাসে এদের প্রজনন মৌসুম, গাছের গর্তে বাসা তৈরি করে। পাখিটি বাংলাদেশের আবাসিক পাখি।পাখিটির মূল আবাসস্থল বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরহরিৎ বনাঞ্চল। এছাড়া দেশের মধ্যভাগের মধুপুর বনাঞ্চলেও ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়। ঢাকা শহরে বন্যপাখি পালনের প্রবণতা দেখা যায়, যা বন্যপাখির জন্য হুমকি স্বরূপ এবং তাদের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। বিভিন্ন সময়ে এই প্রজাতির পাখিদের ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়। যার ফলে ঢাকায় এখন প্রায় এই পাখির দেখা মেলে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রমনা পার্ক, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর এলাকায়। তবে এদের ঢাকা শহরের কোথাও প্রজননের কোন হদিস এখনও মেলেনি।
লালমাথা-টিয়া (Plum-headed Parakeet) যার বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula cyanocephala (সিটাকুলা সায়ানোসেফালা)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিজ্ঞান কারখানার সামনের বট গাছে সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে বটফল পাকলে একঝাঁক লালমাথা টিয়া বা হিরামন টিয়ার দেখা মেলে প্রতিবছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মিরপুর, উত্তরায় এই পাখিটির দেখা মেলে। রূপকথার সেই হিরামন নামে পরিচিত পাখিটি লাল মাথা টিয়া। দৈর্ঘ্যে ৩৬ সে.মি। হলদে সবুজ দেহ। নীল লেজের প্রান্ত সাদা। হলদে চোখ। উপরের চঞ্চু ফিকে কমলা হলুদ এবং নিচের চঞ্চু কালচে বাদামি। পুরুষের মাথা লাল। থুতনি ও গলায় কালো দাগ। স্ত্রী পাখির মাথা ধূসর বর্ণের। গলা ও ঘাড়ে হলদে ব্যান্ড। তীব্র শব্দ করে ডাকে। দেশের মধ্য ভাগ, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বনভূমিতে পাওয়া যায়। এটি একটি বিরল আবাসিক পাখি। দিবাচর পাখিটি একা অথবা ছোট গ্রুওে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সাধারণত ফল শস্যদানা, ফুল, বীজ ও মধু খায়। গাছের কোটরে গর্ত করে বাসা তৈরি করে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম।
ঢাকা শহরের নগরায়ণ বর্তমানে আশপাশে অনেক বেশি বর্ধিত হচ্ছে, যার ফলে দেশি বুনো গাছ, শষ্যক্ষেত ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে খাদ্যাভাবে টিয়া গুলো হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকা শহর থেকে। এছাড়া শিকারির ফাঁদ, চোরা শিকার সহ বিভিন্ন কারণে কমছে টিয়াদের সংখ্যা। আমরা সচেতন না হলে হয়ত অচিরেই হারিয়ে ফেলবো আমাদের এই টিয়াদের।
ছবি ও লেখা: ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান
সূত্র : The Business Standard